কৃষকের ২ টাকায় বিক্রি করা বেগুন খুচরা বাজারে ৩০ টাকা।

সারা বাংলা

কৃষকের ২ টাকায় বিক্রি করা বেগুন খুচরা বাজারে ৩০ টাকা

কৃষকের ২ টাকায় বিক্রি করা বেগুন খুচরা বাজারে ৩০ টাকা

হঠাৎ করেই কৃষক পর্যায়ে কমে গেছে বেগুনের দাম। গত কয়েক দিন ধরেই সরাসরি কৃষক বিক্রি করতে পারেন বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার এমন পাইকারি বাজারগুলোতে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে বেগুন।

কোথাও ১ টাকা কেজি আবার কোথাও দুই থেকে আড়াই টাকা কেজি। বুধবার (২০ মার্চ) বগুড়ার সবজির মোকাম মহাস্থানহাটে বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রকার এবং গুণমান ভেদে ৫০ থেকে ২৫০ টাকা মণ। তবে খুচরা বাজারে এখন পর্যন্ত বেগুন ১০ টাকা কেজির নিচে কোথাও বিক্রি হয়নি। বুধবার পর্যন্ত বগুড়া শহরের খুচরা বাজারগুলোতে প্রকার এবং গুণমান অনুযায়ী বেগুন বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। শহরের খান্দার, কলোনী, ফতেহ আলী এবং রাজাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এমতাবস্থায়, বগুড়ার কৃষি বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে বেগুনের উৎপাদন বেশি হওয়ায় এমনটা হয়েছে। তবে বেগুন কৃষকদের জন্য লাভজনক। কৃষকরা বলছেন, ভালো দাম দিয়ে বেগুন কিনবে এমন ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের অন্যান্য বড় মোকামে বেগুনের চাহিদা কম। যে কারণে এমন দরপতন। তবে শুধু বেগুন নয়, রমজান মাসের কারণে সব ধরনের সবজির চাহিদাই কম।

বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি রবি মৌসুমে জেলার প্রায় ৩০ হাজার কৃষক ১৪১০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। উৎপাদন হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৪ মেট্রিক টন। গত রবি মৌসুমে কৃষকরা ১৫০০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন। যা থেকে উৎপাদন হয়েছিলো ৩৫ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। এবারের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের চেয়ে ৯০ হেক্টর কম জমিতে বেগুন চাষ করেও এবার এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন বেগুন বেশি উৎপাদন হয়েছে।  

বগুড়ার কৃষকরা বিটি-১ থেকে বিটি-৪, বাল্ব, খটখটি, সিংনাথ প্রভৃতি জাতের বেগুন বেশি চাষ করেছেন। এছাড়া কিছু কৃষক হাইব্রিড জাতের বেগুনও চাষ করেছেন।

বগুড়ার শাজাহানপুরের খাদাশ পোয়ালগাছা গ্রামের বেগুন চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছিলাম। রোজার আগে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করেছিলাম ২ হাজার টাকা। সেই বেগুন এখন বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৪০০ টাকা মণ। এরপরেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার পাইকাররা আসছেন না।

একই গ্রামের অপর বেগুন চাষী আয়নাল হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষে ওষুধসহ সব মিলিয়ে খরচ হয় অন্তত ৫০ হাজার টাকা। প্রতিবার বেগুন তুলতে শ্রমিককে দিতে হয় ৪০০ টাকা।

শেরপুরের সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের কৃষক তারিকুল ইসলাম বলেন, আমি এই প্রথম ৫ মণ বেগুন তুলেছি। গত শনিবার বেগুনগুলো ৬০ টাকা খরচ করে চান্দাইকোনা পাইকারি বাজারে নিয়ে যাই। সেখানে ১ টাকা কেজি বিক্রয় হচ্ছিল। তখন আমি বিক্রি করিনি। এর ১ঘন্টা পর আর বেগুন ক্রয় করার জন্য ক্রেতা নেই। এরপর বাজারেই বেগুন রেখে পালিয়েছি।

শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলার বেগুন চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, আমি গত ২ সপ্তাহ আগে মহাস্থানহাটে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করেছি ১ হাজার টাকায়। এর কিছুদিন পর ৬০০ টাকায়। এখন তো দাম একদম পড়ে গেছে। এই দামে বিক্রি করলে তো আমাদের ক্ষতি হবে। জমি থেকে উঠানোর মতো বেগুন এখনও অনেক আছে। কিন্তু এরকম কম দামে বিক্রি করতে হবে তাই বেগুন উঠাচ্ছি না।

কেমন দামে বিক্রি করলে আপনারা লাভে থাকবেন জানতে চাইলে কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ বেগুন বিক্রি করতে পারলে আমাদের লাভ থাকবে।

মহাস্থানহাট ইজারাদারের প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মটু বলেন, বুধবার মহাস্থানহাটে প্রকারভেদে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ২৫০ টাকায়। এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটের ওদিকে বেগুন কম যাচ্ছে, যে কারণে দাম এমন কমে এসেছে। কিছুদিন আগে বেগুন ছিলো প্রতিমণ ২ হাজার টাকা।  রোজার কারণে লোকজনের সবজির উপর চাহিদা কমে গেছে। সবজিটা তো যেতে হবে ঢাকায়। শুধু কারওয়ান বাজার না ঢাকার বিভিন্ন মোকামে সবজিগুলো ঢোকে। সিলেটের বিভিন্ন মোকামে সবজি যায়। রমজানের আগে ঐ বাজারগুলোতে যেরকম সবজি গেছে সেই রকম করে কিন্তু এখন যাচ্ছে না। এটাই মূল বিষয়। বিক্রি কমে যাওয়ায় দাম কমে গেছে।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আগে ঢাকার পার্টিরা হয়তো দিনে ১০ টন মাল কিনতো; কিন্তু সেখানে এখন ২-৩ টন মাল কিনছে। তিনি আরও বলেন, আমরা টেলিভিশনে দেখছি, রাজধানী ঢাকাতে সবজির চড়া দাম। তারা সবজি পাচ্ছে না। আবার আমাদের এখান থেকে নিচ্ছে না। এখন আমরা মূল ঘটনা কোনটাকে ধরে নেবো?

বগুড়া রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, মোকামে যদি বেগুন ৭ টাকা কেজি হয়। খাজনা দিতে হয় কেজি প্রতি ৩ টাকা। এরপর গাড়ি ভাড়া, লেবার কস্ট, আড়ৎ ভাড়া সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের কেজি প্রতি খরচ হয় ধরা যাক ৮ টাকা। ব্যবসায়ীদেরও তো কিছুটা লাভ করতে হবে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতলুবুর রহমান বলেন, আমরা ধারণা করছি সম্ভবত রমজানকে টার্গেট যে কৃষকরা জমিতে বেগুন লাগিয়েছিলেন, তাদের প্রত্যেকের ফসল সংগ্রহের সময় একই সময়ে হয়েছে। যে কারণে এরকম দরপতন হয়েছে। এটা কৃষকরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করে ফেলবে এবং তারা সেভাবেই এটা বাজারে নিয়ে আসবে। তিনি বলেন, বেগুন একটি লাভজনক ফসল। এটি আবাদ করে কৃষক কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কারণ এটি ৪-৫ মাস ফসল সংগ্রহ করা যায়। এই অস্বাভাবিক দাম কমাটা খুব বেশিদিন থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *