অবৈধ বালু উত্তোলন, ভ্যাকুর আঘাতে শিশু নিহত, দায়ী কে? প্রশ্ন আশ্রয়ন বাসীর

বীরগঞ্জ দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ গতকাল ৮ নভেম্বর’২০২৪ সকালে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ভাঁতগাও ব্রীজের অদুরে পাল্টাপুর আশ্রয়ন প্রকল্প সংলগ্ন ঢেপা নদী হতে অবৈধ বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ভ্যাকুর দ্বারা এ মর্মান্তিক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে নিহত শিশু সুজনের নানা অলোক রায় এবং স্বজনসহ এলাকাবাসীর দাবী।

এ ঘটনায় বালু উত্তোলনকারী মুন্না ট্রেডার্সের মালিক পাল্টাপুর নিবাসী মৃত বেশার উদ্দিনের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন রাজা, তার পার্টনার জসিম উদ্দিন ও সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা ভ্যাকু চালক মহিরের বিরুদ্ধে অলোক রায় বাদি হয়ে অভিযোগ করলে রাতেই বীরগঞ্জ থানায় ৩০৪(ক) ধারায় ৫ (১১)২৪ নম্বর মামলা রুজু হয়।

পুলিশ ঘটনাস্থল হতে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য দিমেক হাসপাতালে প্রেরন করেছে।

নিহত সুজন (৮)-এর বাবার নাম সাগর রায় তাদের বাড়ি ঠাকুরগাও জেলার হরিপুরে।

গত বছরের কোন এক সময় তোফাজ্জল হোসেন রাজা দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে নদী খননের দুই তীরের স্তূপ করা বালু লট নম্বর ৩ ইজারা নিয়ে শর্তভঙ্গ করে এই পথে অপসারণ করেছেন।

ইজারা মেয়াদ ২ অথবা ৩ মাসের স্থলে প্রসাশন তথা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং টেন্ডার কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বীরগঞ্জ কে মোটা অংকের টাকার বিনিময় ম্যানেজ করে অর্থাৎ ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে মাসোহারা দিয়ে অবৈধভাবে বছরের পর বছর বালু মহালের ন্যায় নদী গর্ভের বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে।

দিবারাত্রি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং ১০ চাক্কার ডাম্প ট্রাকে পরিবহনের ফলে হুমকির মুখে রয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্প, ভাতগাও ব্রীজ, সরকারী কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত কাচা পাকা রাস্তা, পুল কালভার্ট সমুহ।

প্রাননাশের আশংকাসহ ঐসব ঘটনায় এলাকাবাসী বালু উত্তোলন বন্ধে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করে। বেশ কিছু দিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে।

সম্প্রতি তোফাজ্জল হোসেন শর্তভঙ্গের বকেয়া টাকা পরিশোধ করে আবারও কয়েকজন পার্টনার নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং টেন্ডার কমিটির সভাপতিকে ম্যানেজ করে জোরেসোরে অবৈধ বালু উত্তোলন শুরু করে এবং গত ৮ নভেম্বর’২৪ ভ্যাকু দিয়ে শিশু প্রাননাশের ঘটনা ঘটে।

ফলে সেখানে দিনব্যাপী চলেছে টান টান উত্তেজনা ক্ষোভ ও শোকের মাতম। ঘটনার পর ভ্যাকু চালক পালিয়ে গেছে, ঐ ঘাটে বালু উত্তোলন আপাতত বন্ধ রয়েছে।

একইভাবে টাকার বিনিময় ইউএনও কে ম্যানেজ করে আত্রাই নদী কাশিপুর মৌজা, ভোগডোমা, নর্তনদী তথা বীরগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ বালু উত্তোলন চলছে মর্মে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফজলে এলাহী’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিআইডব্লিউটিএ দিনাজপুর কর্তৃক ঐসব খননকৃত বালু ইজারা দেয়া হয়, শিশু নিহতের ঘটনায় তোফাজ্জল সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেন, তিনি কোন ঘাট থেকে বালু উঠবে কি না সেটা নির্ভর করে পাউবো’র উপর, আমরা তাদের আইনি সহায়তা করি মাত্র কিন্তু পাউবো দিনাজপুরের এসডিই’র মোঃ মাহাতাব আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন উল্টো কথা, তোফাজ্জল হোসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগসাজসেই বালু উত্তোলন করে চলেছে, আমাদের কে তোয়াক্কাই করে না।

সচেতন মহলের দাবী সঠিক তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে, শিশু হত্যার দায় পাউবো দিনাজপুর এবং ইউএনও বীরগঞ্জ এড়াতে পারে না।

অভিযুক্ত তোফাজ্জল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান আমি ইজারা নিয়েছি, আমার কাগজপত্র আছে।

এ ব্যপারে অফিসার ইনচার্জ বীরগঞ্জ থানা মোঃ আব্দুল গফুরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন নিহত শিশুর নানা অলোক রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে, অপরাধীদের কে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *