আবু রায়হান: স্বপ্নচারী তরুণ থেকে মানবিক আন্দোলনের পথিকৃৎ
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বানিয়ারী গ্রামের আবু রায়হানের জীবন কাহিনী এক অভাবনীয় উদাহরণ। শৈশবে দক্ষিণ বানিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় তার। পরে দীঘিরজান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পিরোজপুর থেকে মাধ্যমিক এবং জাহানাবাদ সেনানিবাসের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খুলনা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে।
স্কুল ও কলেজ জীবনে রায়হান ছিলেন একজন সাধারণ শিক্ষার্থী। ফুটবল খেলায় পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও মেধার দিক থেকে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর তার জীবনধারা পাল্টে যায়। আইনে পড়াশোনা করা এই তরুণ তার যুক্তি ও বিতর্কের দক্ষতায় জাতীয় পর্যায়ে আত্মপ্রকাশ করেন। তার ভাষণ এবং যুক্তিতর্কে দেশের শীর্ষ আইনজ্ঞ হওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আইনের ছাত্র হয়েও বাংলা সাহিত্যের প্রতি রায়হানের গভীর আগ্রহ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আহমেদ ছফা ও সলিমুল্লাহ খানের মতো সাহিত্যিকদের প্রতি তার আসক্তি তাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিনের মতে, সলিমুল্লাহ খান একজন জীবন্ত লাইব্রেরি, যার জ্ঞানশক্তির প্রতি আকর্ষণ রায়হানের সাহিত্যপ্রীতি বাড়িয়েছে।
মানবতার প্রতি আবু রায়হানের অঙ্গীকার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। “বৃদ্ধাশ্রমকে না বলি” স্লোগান নিয়ে তিনি সাইকেলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ক্রস-কান্ট্রি সফর করেছেন, যার মাধ্যমে বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন। রায়হানের প্রচারণার মূল বার্তা ছিল, সন্তানেরা যেন তাদের বৃদ্ধ পিতামাতাকে জীবনের শেষ প্রান্তে অবহেলা না করে, বরং তাদের ভরসার কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে।
রায়হানের এই আন্দোলন এবং প্রচারণা দেশের অসংখ্য মা-বাবার মনের প্রতিধ্বনি হয়ে উঠেছে। তার প্রচেষ্টায় সমাজে মানবিকতার আলো ছড়িয়ে পড়ছে, যা বৃদ্ধাশ্রমের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তার মতো মানসিকতা দেশের প্রতিটি সন্তানের মধ্যে জাগ্রত হলে, সমাজে বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজন হয়তো থাকবে না।
আবু রায়হানের এই সংগ্রাম শুধু তার নিজের জীবনকেই আলোকিত করছে না, বরং জাতির ভবিষ্যত পথচলায়ও এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। তার এই উদ্যোগে দেশের মানবিক চেতনা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রায়হানের সাফল্য দেশের যুবসমাজকে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে এবং নিজেকে মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করছে।